উপকূলের দিকে তাকান, পাথরের বাঁধ দিয়ে জোয়ারের প্লাবন ঠেকান, মানুষকে বাঁচান

0

২০জুলাই ২০১৪ তারিখ, দুপুর তিনটায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বেসরকারী সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট, উপকূলীয় উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ও জনসংগঠন প্রভৃতি সংগঠনের উদ্যোগে গঠিত উপকূলীয় উন্নয়ন সংগঠন জোট-এর উদ্যোগে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলার উপকূলের লোকালয়ে জোয়ারের প্লাবন রোধে স্থায়ী বেড়িবাঁধের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মানববন্ধনের এ সমাবেশে আয়োজনকারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ জনগণ এ মানববন্ধন ও সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনের জমায়েতে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন-সম্প্রতি কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া টেকনাফ ও কক্সবাজার সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার লোকালয়ে জোয়ারের পানিতে মানুষের বসতবাড়ি, ধানের জমি, মৎস্যখামার ও রাস্তাঘাট ব্যাপকভাবে প্লাবিত করেছে এবং সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন জীবনযাপনে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েন। প্রতিদিন দৈনিক পত্রিকার পাতায় উপকূলের মানুষের এ বিপন্নতার ও দুর্ভোগের খরর ছাপছে।

বক্তারা বলেন-উপকূলের জনগণের এ দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ জনগণ কক্সবাজার সদরে মানব বন্ধনে জমায়েত হয়েছে। সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাঁচার অধিকার মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫ নং ধারার নাগরিকদের আশ্রয় নিশ্চত করাসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ আছে। অথচ রাষ্ট্র সেই অধিকার বাস্তবায়ন উপকূলের মানুষের ক্ষেত্রে উপেক্ষা করে চলেছে। বক্তারা বলেন, ৬০ ও ৭০ দশকে সিসি ব্লক ফেলে উপকূলীয় ভংগন রোধে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও বিগত ৩০ বছরে বৃহৎ কোন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। সম্প্রতিক সময়ে বাস্তবায়িত বেশীরভাগ প্রকল্প আকারে ছোট এবং সমাধানে অস্থায়ী (জিও ব্যাগ, নদীর তীর উপকরণ, রিং বেরী, ইত্যাদি)।

বক্তারা বলেন, বিজ্ঞানভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন গবেষণা ফলাফলে দেখা যায় গত ৫০ বছরে কুতুবদিয়া দ্বীপ এবং ভোলা প্রায় অর্ধেক ভূখন্ড হারিয়েছে। এবং গবেষকগণ আশংকা করছেন আগমাী ৫০ বছরে হয়তোবা এই দুটি দ্বীপ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তাদের কি নিজ আশ্রয়ে বেঁচে থাকার অধিকার নাই? নদীর ভাংগনের ক্ষতিকর প্রভাব সর্বমুখী আর গরীব মানুষের শেষ পরিণতি নি:স্ব হয়ে অন্যত্র গমন; কক্সবাজার শহরে কুতুবদিয়া পাড়া, মহেশখালী পাড়া বা ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে ভোলা বস্তি যার অন্যতম উদাহারণ।

কক্সবাজার জেলার কর্মরত উন্নয়ন সংস্থাসমূহের নেতৃবৃন্দগণ মনে করেন, আর্থিক সংগতির ঘাটতি স্থায়ী কোন প্রতিবন্ধকতা নয়। এখানে প্রয়োজন সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী এবং ভাংগন রোধে কাজ করার দৃঢ়তা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী, পানি বিশেষজ্ঞ এবং দুর্যোগ ঝুকিঁ হ্রাস কাজে যুক্ত ব্যক্তিবর্গের মতে ভোলা জেলার জন্য সিসিব্লক ও কক্সবাজার জেলার জন্য সীডাইক পদ্ধতিতে বাঁধ নির্মাণ ভাংগন রোধে কার্যকর ও স্থায়ী পদ্ধতি। বক্তারা উপকূলের মানুষের ঘরবসতি ও কৃষিজমি রক্ষার উদ্দেশ্যে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য আরো বেশি বাজেট বরাদ্দের জোর দাবি জানান। বক্তারা বলেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণে জনগণ ও সেনাবাহিনীকে স¤পৃক্ত করতে হবে শুধু পানিউন্নয়ন বোর্ডের ব্যর্থ কর্মকর্তাদের উপর নির্ভর করা যাবে না।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীগণ বিভিন্ন শ্লোগান সম্বলিত প্লেকার্ড হাতে তুলে ধরেন। শ্লোগানগুলি নিম্নরূপ:

‘ভূমি না থাকলে আমরা যাব কোথায়, খাব কি?’ ‘নিজের বসত ভিটায় আশ্রয়ের অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার।’ ‘ নদীভাংগন ও জোয়ার এর প্লাবন রোধ জলবায়ু অভিযোজনের প্রধান কথা।’ ‘ভূমি হারানো নিঃস্ব মানুষ আর দেখতে চাই না।’ ‘বসত ভূমি রক্ষায়, স্থায়ী বাঁধ চাই।’ ‘কৃষি জমি রক্ষা কর, স্থায়ী বাঁধ তৈরি কর।’ ‘উপকূলের ঘর-বসতি রক্ষা কর, স্থায়ী বাঁধ তৈরি কর।’ ‘স্থায়ী বাঁধ নির্মানে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ চাই।’ ‘সেনাবাহিনী নিয়োগ কর, স্থায়ী বাঁধ তৈরি কর।’ ‘টেন্ডার ভাগাভাগি বন্ধ কর, স্থায়ী বাঁধ তৈরি কর। ‘ জোয়ারের প্লাবনে উদ্বাস্তু হওয়া লোকদের জরুরী ত্রাণ সাহায্য দিন’

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মকবুল আহমেদ, টিম লিডার, কোস্ট ট্রাস্ট; উপকূলীয় উন্নয়ন ফাউন্ডেশন এর নেতা আকবর খান, সাংবাদিক হুমায়ূন কবির সিকদার ও জনসংগঠন নেত্রী মাবিয়া বেগম প্রমুখ